সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা: কায়দা করে ছাঁটা চুল। দুই হাতের আঙুলে বেশ কয়েকটি নান্দনিক আংটি। পরনে জিনস আর টি-শার্ট। কুষ্টিয়া শহরে কেউ তাঁকে দেখে বিস্মিত হন। কেউবা মুগ্ধ। কারও কারও তো আবার তাঁর কাজ নিয়ে কৌতূহলের নেই। নাম তাঁর রজনী অধিকারী। কাজ করেন ফুড ডেলিভারিম্যান বা খাবার সরবরাহকারী হিসেবে। ঘরে বসে মুঠোফোনে খাবার ‘চাহিবামাত্র’ রেস্তোরাঁ থেকে তা-ই পৌঁছে দেন রজনী। কুষ্টিয়া শহরে অনলাইন খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফুড পান্ডার একমাত্র নারী সরবরাহকারী রজনী অধিকারী।
পুরো বাংলাদেশে ফুড পান্ডার নারী ফুড ডেলিভারিম্যান আছেন জনা সাতেক, তাঁদেরই একজন ১৯ বছরের রজনী। একসময় যেসব কাজ শুধু পুরুষদের জন্যই নির্ধারিত ছিল, সেসব কাজ যে নারীরাও আনন্দ নিয়েই করছেন, রজনী তারই উদাহরণ। রজনী শৈশব থেকেই সাহসী। নিজের পছন্দের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। রজনী বলেন, বসে থাকতে ভালো লাগে না।
কাজ করে নিজে আয় করি। ভালো আছি, যেমন কাজই হোক, তা করা লজ্জার না। রোদ, বৃষ্টি, ঝড়—কিছুই বাধা নয় রজনীর কাজে। রোজ বের হন। কখনো বাইসাইকেলে, কখনোবা মোটরবাইকে ছোটেন কুষ্টিয়া শহরে। তাঁর পাশে বসে কুষ্টিয়া শহরের অলিগলি কিছুটা ঘুরে বুঝলাম, মোটরবাইক বেশ দক্ষতা নিয়ে চালান। বাতাসের গতিকেই হার মানায়। রজনী বলেন, ‘“পুরুষালি” পোশাক পরি বলে লোকজন একসময় কটু কথা বলত।
তবে গা লাগাইনি। মা-বাবা আমার সব কাজে উৎসাহ দেন।’ রজনীরা দুই বোন। বড় বোন অন্তরা অধিকারী বিবাহিত। বাবা অশোক অধিকারী আর মা অর্চনা অধিকারী। কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ায় তাঁদের বাড়ি। রজনীর মোটরবাইকের পেছনে বসেই তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল বাড়ির নাম রবীন্দ্রনাথ ভিলা। দাদার নামে নাম বাড়ির।
মূল ফটকের বাইরেই রজনীর কাকা সুজন কুমার অধিকারী দাঁড়িয়ে। কাকা আনন্দ নিয়ে কথা বলতে এগিয়ে এলেন। তিনি জানালেন, রজনী পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করেন। বড়দের কথা শোনেন। বাড়ির কারও কিছু লাগলে দ্রুত নিয়ে আসেন। বাবা চাকরি করেন একটি ব্রিটিশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। মা পেশায় একটি বেসরকারি ক্লিনিকের নার্স। মা-বাবার সহায়তায় রজনী এই পেশায় এসেছেন।
রজনী ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করেছেন কুষ্টিয়া হাইস্কুল থেকে। এখন ডিপ্লোমা করছেন কুষ্টিয়া আইডিয়াল পলিটেকনিক থেকে। পড়ার পাশাপাশি স্বাবলম্বী হওয়ার বাসনা থেকেই এই কাজ করেন রজনী। ফুড পান্ডার কুষ্টিয়া অফিসে বসে কথা হয় আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ফজলে রাব্বীর সঙ্গে।
তিনি জানালেন, রজনী সঠিক সময় ও বিনয়ের সঙ্গে কাজ করেন। এ ছাড়া তাঁর কাজের দক্ষতা বেশ। গত পাঁচ মাস খুব কম সময়ে তিনি ভালো কাজ করেছেন।